Poems by foriduz zaman
গফুর মহেশ আমেনার বেশ
শরৎচন্দ্র দেখে সে রন্ধ্র এঁকেছেন আমেনাকে
ভাষার গড়নে নিখুঁত বরণে গফুর মহেশটাকে।
আজো বস্তিতে নেই স্বস্তিতে বংশ পরম্পরা।
ভোগে রোগে শোকে অনাহারে ধোঁকে সয় সে বন্যা খরা।
বর্গী ও চর আর নীলকর সাহেব ও জমিদার
তারা চলে গেছে তবু রেখে গেছে দ ভ্যাম্পায়ার।
কঙ্কালসার দেহটা চাষার চুষেছে অক্টোপাস
গফুর সয়েছে শীর্ণ হয়েছে উঠেছে নাভিশ্বাস।
রাজা যায় আসে তার নিজ বাসে আশায় বাঁধে সে বুক
ভঙ্গুর আশা খেলে শুধু পাশা ভরসারা উজবুক।
দাদনের কলে জীবন বিফলে ভাগ্যের পরিহাস
উন্মূল এরা শত গফুরেরা গলায় দিয়েছে ফাঁস।
এমন হাজার আমেনারা তার সম্ভ্রম বেচে খায়
স্বাধীনতা পেয়ে কারাগারে মেয়ে বিরূপ সভ্যতায়।
জানো নাতো তুমি আজো এই ভূমি তোমার সৃজন চায়
যুগযন্ত্রণা আঁকে আলপনা করে শুধু হায় হায়।
শরৎসৃষ্টি দরদ বৃষ্টি নির্ঝরে ছোঁয় প্রাণ
গফুর মহেশ আমেনার বেশ করুণ উপাখ্যান।
আকুতির স্পন্দন ও জোনাকির গল্প
স্কুল পালানো বন্ধুদের মধ্যে কে যেন একজন গল্পচ্ছলে বলেছিল-
মৃতের আত্মারা জোনাকি হয়ে ছেড়ে যাওয়া পৃথিবী কে দেখতে আসে।
শুনতেই আমার যুক্তিবাদী মন এ কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল।
বহুদিন পর একটা সরকারী প্রজ্ঞাপন ও কার্যকরণে বিব্রত এতোদিনের
অবিশ্বাস একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস এনেদিল-
”শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে যাঁরা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবেন
তারা দয়া করে শ্রদ্ধাঞ্জলি বানানটি শুদ্ধ করে লিখবেন।
অর্থাৎ অঞ্জলিতে যেন হ্রস্ব-ই-কারই থাকে।”
একদিন পর দেখলাম- মাননীয় সরকার প্রধানের তরফ থেকে
সবচেয়ে বড় যে ফুলের স্তবক এসেছে তাতে লেখা আছে-
”শ্রদ্ধাঞ্জলী” হ্রস্ব-ই-কার নয়, দীর্ঘ ই কার।
তৎক্ষণাৎ স্কুল পালানো বালকের মতই ভাবলাম-
যদি মৃতের জোনাকিতে রূপান্তরে বিশ্বাস করতাম
তবে আমার কষ্টের আর সীমা পরিসীমা থাকতো না!
ভাবলাম-ভাগ্যিস আমার বিশ্বাসে শহীদেরা আমাদের
কর্ম দেখতে আসেন না তাই রা!
কিন্তু দায়সারা কর্মে শেষ রা কি আর হয়!
আকুতির স্পন্দনে একটি কণ্ঠ কানে বেজে উঠল-
”সব ক’টা জানালা খুলে দাও না ওরা আসবে চুপিচুপি
যারা এ দেশটাকে ভালবেশে দিয়ে গেল প্রাণ..”
শুনতেই আমার স্বস্তির প্রশান্তি কর্পূরের মেঘ হয়ে উবে গেল।
সেই কর্পূরে মেঘরাশির গভীর মঞ্চে যাত্রার বিবেকের কণ্ঠে ধণিত হচ্ছে-
’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি..’
এই সুরে সুর মিলিয়ে ভুল নক্ষত্রগুলোর পতন ঘটছে
আর আপন জোনাকিরা নক্ষত্র হয়ে উঠছে বিশ্বময়।
Poems by foriduz zaman
কৃ্ষ্ণনগরের পুতুল
একদিন দৌলতদিয়া ঘাটে নদীর পাড়ে ইতিউতি
তাকাতেই এক ষোড়শী টিপ্পনী কেটে বলেছিল-
কৃ্ষ্ণনগরের পুতুল গলির ভেতর ঢোক, সব তৃষ্ণা
জল হয়ে যাবে।
আতঙ্কের ভেতর সেদিন পাগলিনী ভেবে তাকে
এড়িয়ে এসেছিলাম।
ভাবনার ভেতর আজও কৃ্ষ্ণনগরের পুতুল..
তৃষ্ণার জল হয়ে যাওয়া.. ষোড়শীর ডাক..
ইত্যাকার ধাধারা উত্তর খুজে বেড়ায়।
মনে পড়ে পুরানো দালানের কার্নিশে জোড় শালিকের
আদরের প্রতি একাগ্র দৃষ্টি মেলে গায়ের জমিদার কন্যা
‘কৃ্ষ্ণনগরের পুতুল’ সম্বোধন করেছিল আমাকে।
কতোকাল সে সম্বোধনটা গালি ভেবে কতোইনা
কষ্ট পেয়েছি।
লাইট হাউজের সেলিব্রেশন পার্টিতে শিল্পীদের সত্তা জুড়ে
পুতুলের আধিক্য দেখে ‘কৃ্ষ্ণনগরের পুতুল’ এর অর্থ
অংশত বুঝেছিলাম।
কৃ্ষ্ণনগরের পুতুল পট্টিতে পালদের হাতে মানস
অভিব্যক্তির কারুকাজে রঙ্গমঞ্চের কুশীলব
মুখচ্ছবি মূর্ত হয়ে উঠেছিল।
সেই থেকে ঘোরের মধ্যে আমার নিরন্তর অস্তিত্ব বদলিয়ে
পুতুল হয়ে যাওয়া আর
নিজের ভেতর চিরপুতুল বীক্ষণ।
এলিট বনাম রুট
এলিট এবং রুটের মধ্যে উঠছে মস্ত দেয়াল
বিবেক বাবু সব সময়ই করছে এটা খেয়াল।
এলিট এবং রুটের মধ্যে গিজিগিজি দ্বন্দ্ব
এলিট মুখে খৈ ফুটিয়ে বলছে রুটে গন্ধ।
গন্ধমুখে ঘামে জবজব মজুর এবং মুটে
ফুল চন্দন পরিপাটি দেয়াল কি যায় টুটে?
মাটি থেকে উঠে আসা রুটই তৃণমূল
তবু তাদের মূল্যায়নে সবাই করে ভুল।
তৃণমূলের রক্ত ঘামে জাতীয় অর্জন
এলিট তাদের ল্যাং মেরেই করেছে বর্জন।
নাঙা পায়ে উদোম গায়ে তৃণমূলের হাঁটা
দেশপ্রেমে মৃত্যুপণে মহৎ বুকের পাটা।
স্যুটেড বুটেড এলিট ভীরু পরগাছারই মত
তৃণমূলের বীরগাথা গান গাইছি অবিরত।
Poems by foriduz zaman
চ্যাম্পিয়নের মালা
গ্রীষ্মে যখন দাবদাহ বয়
নদীর জলে ডুবতে খোকার তখন কি তর সয়?
ডুবে ডুবে সিঁদলে পড়া দেহ
খোকাকে কি চিনতে পারে কেহ?
চোখ দুটো লাল কানাকুয়ায় রঙ
বলছে খোকা-দেখো না মা সাজছি দারুণ সঙ!
মা বলছেন- নদীর দহে কামট আর চুলবালি
ডুবিয়ে নেয়, গা কাঁটা দেয় আঁৎকে ওঠে খালি!
খোকা বলে- ভয় তো পাই না কুয়ার ব্যাঙের মতো
বীর নাবিকে জয় করে মা ভয়কে শত শত।
সাত সাগর আর তের নদীর নাবিক হবো আমি
তোমার ভয়ে ইচ্ছা আমার রয়ে যাবে ডামি।
আসছে বর্ষায় নৌকো বাইচে আমার জেতার পালা
তখন তোমার ছেলে পাবে চ্যাম্পিয়নের মালা।
কৈশোর
বিল ঝিল সাঁকো নানা রঙে আঁকো দুরন্ত ছেলেবেলা
পূজা পার্বণ ঈদ উত্সব আড়ং জমেছে মেলা।
দিগন্তজোড়া খেসারির ক্ষেতে তোমাদের লুকোচুরি
চঞ্চল পায়ে লাটাই সুতোর উড়ায়ে চলেছ ঘুড়ি।
জীবনের মানে আবিস্কারের নেশায় বিভোর চোখ
হাসি খুশি বান আনন্দ গান দূরে ঠেলে দিছো শোক।
স্নেহের আশীষ আদরের শিস শ্যামল মাঠের ডাক
আলিঙ্গনের কাঁপা কাঁপা বুকে ঘুচে যায় রাখঢাক।
শুধু অনাবিল শান্তির ঢেউ কৈশোর প্রচ্ছদে
জীবন ভরবে কানায় কানায় মণি মাণিক্য হ্রদে।
গঞ্জ ও গাও কুড়ানীর বাও ঝিলমিল ঢেউ খেলে
চান্নি পরশা কুয়াশা চাদরে রূপে রসে সুখ মেলে।
ষড়ঋতু জুড়ে নানান ছন্দে জগতের সংগীত
আনন্দ রসে জীবন তৃষ্ণা কৈশোর রচে ভিত।
মায়ের কান্না
ছোট্ট খোকন প্রশ্ন করে মাকে- কেনো এতো কাঁদো?
চোখের জলে আমায় শুধু ভয়ের সুতোয় বাঁধো!
মা হেসে কন- কারণ আমি মা যে।
বয়স হলে বুজতে পারবে কান্নাটা নয় বাজে।
খোকন বলে- তোমার কথা বোঝা বড় দায়,
জটের জালে জড়িয়ে শুধু তলীয়ে যাই হায়!
উত্তর না পেয়ে খোকন, বাবার কাছে জানে-
সকল মাই এমনই কাঁদে এ কাঁদার নাই মানে।
ছোট্ট খোকন বড় হয়ে যুবক হলো যখন
মায়ের কান্নার মানে জানতে ব্রতী হলো তখন।
রহস্যটা জানকে খোকন বিপুল প্রহর গোনে
ভগবানের কাছে স্বপ্নে শুনলো টেলিফোনে-
আমি যখন সৃষ্টি করি মাকে,
বিশেষ কিছু গুণ দিয়ে দেই তাকে।
পৃথিবীরই ভার বইতে ঘাড়েতে দেই দারুণ শক্ত পেশী
শক্তি যে দেই জন্ম দিতে শিশু যে ভার বড্ড বেশি।
খোকন বলে- আর কী দিলে মাকে,
অল্প কথায় বুঝিয়ে দাও তাকে।
ভগবান কন- বাছার থেকে যদি কখন নিদারুণ দুখ আসে
তা সইতেও শক্তিও দেই নীরব সুখের চাষে।
এই গুণে মা সবার হেলায় আঁকড়ে ধরে মাটি
পরিবারের কল্যাণে মা সবার শীতল পাটি।
রোগের ভোগে অবসাদে বিণা অভিযোগে
জনমদুখী গঞ্জনা সয় অবহেলায় শোকে।
খোকন বলে- ও ভগবান আর কী দিলে মাকে?
রহেস্যেরই ঘোরে আমি ভীষণ দুর্বিপাকে।
ভগবান কন-দুঃখ সুখে বাছাকে তার ভালোবাসার দেই যে অনুভূতি
চরম অবহেলাও মা ছড়ান শুধু স্বর্গ সমান দ্যূতি।
মায়ের চোখে জলের আধার ভিজিয়ে দেয় সব
বুক ভাঙা মা নরক আগুন নিভিয়ে দেন ধপ।
লাল কার্ড
ইউসুফ প্রেমে জুলেখারা আজো ছুরিতে আঙ্গুল কাটে
তোমার প্রণয়ে নিজেকে কাটলে ভাবালুতা বলো তাকে
রাজা নিরো ছিলো সুরের নেশায় পতনের অভিমুখে
সৃষ্টির সুখে আমার পতনে ধিক্কার দাও শুধু।
মরে যেতে যেতে ফিনিক্স পাখি জন্মে রক্তবীজে
হেয় করে বলো- তোমার মরণে জন্মাবে তেলাপোকা!
বরপুত্ররা পঙ্ক্তিতে আঁকে কাব্যসাগর সুধা
আমার লেখাটি পড়ে তুমি বলো- পান্সে ও পাগলামো!
তোমার প্রেমের অনুভবে আঁকি- অভিষেক স্বরলিপি
অস্বীকার করে তুমি শুধু বলো- এ তোমার পরকীয়া!
বীরপ্রসূ নারী রতœগর্ভা রমণের চাষাবাদে
অথচ আমার রমণে তোমার লাল কার্ড তুলে ধরা।