Bangla Limerick Aslam Prodhan
পঞ্চপদী ছড়া বা লিমেরিক (Limerick)’ হল পদ্যের এক বিশেষ ধরনের রচনা শৈলী, যা সাধারণত ৫টি চরণে হয়। মিলের বিন্যাস : ক ক খ খ ক। প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইন একই মাপের হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। ইংরেজি নার্সারী রাইম থেকে এর উৎপত্তি। সাধারণত পঞ্চপদী ছড়ার বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। এই ছড়া সমূহ কখনো হাস্যরসাত্মক, আবার কখনো সীমা লঙ্ঘন করে থাকে।
যৌবনের বল
দৃঢ়চিত্তে ঝড়ের সাথে লড়ো
লড়াই করে বীরের মতো মরো!
বাতাস দেখে কাঁপে যদি বুক
তবে তুমি ভয়ার্ত শামুক-
জলদি করে রাস্তা থেকে সরো !
ক্লাসের পড়া
আসলাম প্রধান
প্রকাশকালঃ ১৮-০৭-২০২০
আমার যাঁরা স্যার
দেবেন উপহার-
ছড়া প’ড়ে
অংক ক’রে
ধরেছি গ্রামার !
২
পড়া সব-ই শেষ
মনটা কী-যে ফ্রেশ
বাড়ি যাব,
গিয়ে খাব
মুরি ও পায়েস !
অর্থপূর্ণ পঙক্তি
আসলাম প্রধান
অল্প কথায় অনেক কথা
কোনো কথাই নয় অযথা !
শব্দ সব-ই ভারী
অমূল্য, দরকারি-
প্রকাশ করে যথার্থতা ।
গাইবান্ধার আঞ্চলিক লিমেরিক
ঠসা
আসলাম প্রধান
মিছা কতা শুনতে শুনতে কান হোছে মোর ঠসা-
টিপি’র মোদে নাটক করে খাল-পাগারের মশা
আউলাঝাউলা কয়-কী, যা-তা-
বোজোম-না তার কাল্লামাতা !
কোদ্দে মারোম মশার গালোত ইমোট দিয়া ঘষা !
শব্দার্থঃ
টিপি>টেলিভিশন, আউলাঝাউলা>এলোমেলো,বোজোম-না>বুঝতে পারি না, কাল্লামাতা>মাথামুণ্ডু, খাল-পাগার>ডোবা-নর্দমা, কোদ্দে>রাগে, মারোম>মারি, গালোত>গালে, ইমোট>রিমোট]
লিমেরিকগুচ্ছ
বই
আসলাম প্রধান
এত্ত মোটা বই
পড়ার সময় কই ?
একটু নেড়ে
নাস্তা সেরে
অফিসমুখী হই !
২
খুব বড় রচনা-
নেই শিক্ষার কণা !
ঠাট্টাছলে
লোকে বলে
বই না, আবর্জনা ?
৩
ছোট্ট করে লিখি
পাঠক ধরা শিখি।
সবার হাতে
বই পাঠাতে
অল্পদামে বিকি ।
কোয়ারেন্টাইন
আসলাম প্রধান
মানছে না-যে কোয়ারেন্টাইন
বিশেষ পরিস্থিতি-আইন !
তাকে ধরুন,
প্রয়োগ করুন
উপযুক্ত সাজা, ফাইন ।
নিজের ঢোল
আসলাম প্রধান
আমার জেলায় আমিই সেরা, সমান কেহ নাই রে
বন্ধুরা কয়, দোস্ত তুমি যাওনা জেলার বাইরে-
দেখবে তোমায় কজন চেনে,
তোমার পণ্য কজন কেনে ?
ঠিক কথা তো ! বিষয়টা-যে ভাবার মতো ভাই রে !
নিন্দুক
আসলাম প্রধান
বিশুদ্ধ প্রশংসা’টাকে বলছ খাঁটি ‘তেল’
শুনে সে প্রশংসাকারী হলো বেআক্কেল !
তুমি যে নিন্দুক ভাই
কোনোরূপ সন্ধ নাই
বাক্যবাণে করতে পারো ভদ্রকে ঘায়েল।
পরিশ্রমী
আসলাম প্রধান
ওরে বাপ রে বাপ
কত্ত দৌড়ঝাপ !
কালকে রাতে
ঠাকুরগাঁ’তে
আজকে সে টেকনাফ !
Bangla Limerick Aslam Prodhan
জনতার ধাক্কা
আসলাম প্রধান
একটা কথা বলছি শোনো,পাক্কা-
রাখছ যারা বন্ধ, গাড়ির চাক্কা,
আমজনতা ক্ষেপলে,পরে
পড়বে কিন্তু ভীষণ ঝড়ে,
সামাল দিতে পারবে নাকো ধাক্কা !
পিয়াজ আসিতেছে
আসলাম প্রধান
গিন্নি তুমি থাকিও না
অপেক্ষা করিয়া
পিয়াজ আসিবে দ্রুত
বিমানে চড়িয়া
কথাবার্তা কম কও-
মশল্লা মাখায়ে লও
হাঁড়িতে ওঠাও গোস্ত
কালেমা পড়িয়া ।
পেঁয়াজ বিরহ
আসলাম প্রধান
হায়-রে পেঁয়াজ, হায়-রে পেঁয়াজ
ঝাঁজ কী রকম বুঝতেছি আজ !
রান্না ঘরে
কান্না করে
লবন-হলুদ-মরিচ, ঝি-আজ ।
অসময়ের বৃষ্টি
আসলাম প্রধান
সান্ধ্যরাতে ফাঁকা মাঠে হাঁটতেছি ফিটফাট-
নিজের কাছে নিজেকে বেশ লাগছিল স্মার্ট !
এমন সময় ছিঁড়ল শিকে-
বর্ষা নামে এ-কার্তিকে !
বৃষ্টি-কাদায় ভিজিয়ে দেয় ‘নবাবী’প্যান্ট-সার্ট !
অন্ত্যমিল
আসলাম প্রধান
ছড়াতে দেই এমনভাবে অন্ত্যমিল
পড়তে গিয়ে পাঠককুলের দন্ত ঢিল !
চোখ পাকিয়ে, ধমক দিয়ে,
কথার পিঠে চড় বসিয়ে-
কার সাথে কার করিয়ে দেই ছন্দ মিল!
চালাক খদ্দের
আসলাম প্রধান
রাতের বেলা অন্ধকারে মুরগিওয়ালা, ঠক-
দেশিমোরগ বলে দিল পাকিস্তানী কক !
উচিতমতো দাম নিয়েছে
তবুও সে ঠকিয়েছে!
এত চালাক, হয়ে গেলাম বোকা- আহাম্মক!
মাথার পোকা
আসলাম প্রধান
আমরা যারা ক্যাবলা, বোকা-
মাথার ভেতর ঢুকলে পোকা
ভালো কথা
ঠিক বারতা
পেলেও লাগে খটকা, ধোকা- !
বড় মশারি
আসলাম প্রধান
Bangla Limerick Aslam Prodhan
দেশটা দিলে মশারিতে ঢেকে
বাঁচত লোকে মশার কামড় থেকে!
পরামর্শ না-রে বেটা-
মনের দুঃখে বলি এটা,
কানের কাছে ওদের দাপট দেখে!
সর্বনাশার সর্বনাশ
আসলাম প্রধান
সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোমার এবার সর্বনাশ-
দেখতে কী পাও দুকূল ভরা কত্ত লোহা, কত্ত বাঁশ?
সবাই মিলে ধরছে চেপে-
ওঠে না কি বুকটা কেঁপে?
বোঝো কিনা গলায় তোমার আস্তেআস্তে দিচ্ছে ফাঁস?
গাইবান্ধার আঞ্চলিক লিমেরিক
কাতিমাইসা বান
আসলাম প্রধান
অসোমে অঁই মরার দ্যাওয়া কোনঠে থাকি আ’লো
নামাজমিন খায়াখুয়া ভিটার নাগাল পা’লো !
সোগ বেছনের কাছলা খায়া-
মুরি দিকি দেকলো চায়া!
কাতিমাসোত্ ডবগা দিয়া ঠাকরি কালাই খা’লো !
ভাবার্থ : কোত্থেকে অসময়ে টানা বর্ষণ এসে নীচুজমির ফসল ডুবিয়ে উঁচুজমিতে হানা দিল, সমস্ত বীজতলা নষ্ট করল ! অত:পর গরীব কৃষকের সামান্য জমিটুকুর মাসকলইয়ের ক্ষেতটুকুও ডুবিয়ে দিল !
কার্তিক মাসের অকাল বন্যায় আক্ষেপে সে-কথাই বলছেন গরীব কৃষক!
জাকাতের মাল
আসলাম প্রধান
বান এসে চারপাশে পানি উত্তাল
পাড় ভেঙে পুকুরের কী করুণ হাল!
মাছগুলো ভেসে ভেসে
আনন্দে হেসে হেসে
খাল-বিলে গিয়ে আজ জাকাতের মাল!
ত্যাড়া
আসলাম প্রধান
লোকটা ভীষণ ত্যাড়া
মুখেতে নেই ব্যাড়া !
হরহামেশে,
না-বুঝে সে
ভ্যা-ভ্যা করে- ভ্যাড়া !
দ্রুতগামী
আসলাম প্রধান
ঢাকা ছাড়ি
খুলনা পাড়ি-
এলেন
গেলেন
তাড়াতাড়ি!
গরুখেকো
আসলাম প্রধান
ঢাকার মানুষ বেকায়দায়-
চড়াদামে গরু-ই খায় !
বুড়ি-বুড়া
সব, গরুরা-
কাবাব হতে ঢাকায় আয় !
চতুর
আসলাম প্রধান
আসল কথায় দিলে টান
শুনতে পায় না ওদের কান !
চুপটি করে
থাকে সরে-
করে তখন অন্য ভান !
গাইবান্ধার আঞ্চলিক লিমেরিক
বানভাসি
আসলাম প্রধান
নাও’ত চড়ি গাঁও’ত যাও
বানের পানিত্ ধুইও গাও !
পাল্যা-হাঁড়ি,
আন্দাবারি-
শিকাত্ তুলি, বাতাস খাও !
গাইবান্ধার আঞ্চলিক লিমেরিক
বানভাসা ঘাটা
আসলাম প্রধান
এমন ভাঙা ভাঙছে ঘাটা, পুলের দখিনমুরাত্-
ক্যাংকরি মুই পার হম্ বাহে, যায় ভিজা মোর উরাত্ !
দশট্যাকা চায় নাও ভাড়া-
তাই শুনা মোর কাম সারা!
দুকনা ট্যাকাত্ পার হনু বা’- বানুর ব্যাটার ভুরাত্ !
(অর্থ : বন্যার পানিতে ব্রীজের দক্ষিণ পাশে রাস্তা এমনভাবে ভেঙেছে যে, পার হতে গেলে উরু পর্যন্ত ভিজে যাবে । নৌকায় পার হতে গেলে দশ টাকা লাগে! তাই, গরীব পথচারী বানুর ছেলের ভেলাতে দুইটাকা দিয়ে পার হয়েছে! )
যৌবনের বল
আসলাম প্রধান
দৃঢ়চিত্তে ঝড়ের সাথে লড়ো
লড়াই করে বীরের মতো মরো!
বাতাস দেখে কাঁপে যদি বুক
তবে তুমি ভয়ার্ত শামুক-
জলদি করে রাস্তা থেকে সরো !
Bangla Limerick Aslam Prodhan